“সময়ের কণ্ঠস্বর”

 “সময়ের কণ্ঠস্বর”

একটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ও চিন্তা চেতনার প্রতিফলিত হয় সময়ের সাথে ।

আমাদের ঘূণেধরা সমাজটাকে নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টা আমাদেরই করতে হবে । মানুষ ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের কথা এখনো ভুলতে পারিনি । যে অধিকার আদায়ের জন্য আমরা ১৯৪৭,১৯৫২,১৯৭১ মত দুঃসময় পার করেছি , কেন আমরা আমাদের অধিকার  গুলোকে আদায় করতে এখনো পারছি না ? এখনো আমাদের মধ্য বর্ণবাদ সমস্যা , ধর্মীয় সমস্যা ,গরীবের উপর ধনীদের , দূর্বলের উপর সবল এর আধিপাত্য বিস্তার করা ইত্যাদি এখনো চলছে ।  বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বৃটিশ শাসন–শোষন থেকে মুক্ত করার জন্য বলে উঠেছিলেন –

“এই শিকল পরা ছল মোদের এ শিকল-পরা ছল।
এই শিকল পরেই শিকল তোদের করবো রে বিকল।।
তোদের বন্ধ কারায় আসা মোদের বন্দী হতে নয়,

  • — — —- —— —
  • এই লাঞ্ছিতেরাই অত্যাচারকে হান্‌ছে লাঞ্ছনা,
    মোদের অশ্রু দিয়েই জ্ব’লবে দেশে আবার বজ্রানল ।”

 

Mrs. Harriet Beacher Stower – র

“Uncle Toms Cabin” থেকে আমরা আমেরিকার কৃষ্ঞকায় কৃতদাসদের উপর অমানবিক নির্যাতনের এক চেতনা দীপ্ত কথা জানতে পারি । আজ তারা নেই , কিন্তু শোষনের বিরুদ্ধে দূর্নীতির বিরুদ্ধে আজ ব্যাক্তিপর্যায় থেকে রুখে দাড়াতে হবে । বিদেশী অপসংস্কৃতির টিভি নাটক,সিনেমা যে ভাবে আমাদের গ্রাস করছে , সেটা ১৯৫২ মত,১৯৭১ সালের যুদ্ধের মত রক্ত দিয়ে অপসংস্কৃতি রোধ করা যাবে না ।

এই অপসংস্কৃতি যে ক্যান্সার, এইডস এর চেয়ে ও মারাত্মক  সেটা আমরা জানা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত সে গুলোর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছি । আমরা সময়ের সাথে সাথে কি জীবনকে অপসংস্কৃত দ্বারা পরিপূর্ণ করবো ?

 

শুধু তাই নয় আজকাল বিভিন্ন স্কুল কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয়ের বনভোজন সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় যে সব গান,অনুষ্ঠান পরিবেশনা করা হয় তা সু-শ্রুতি অর্থবোধক তো না, অসভ্য সমাজের অসভ্য সংস্কৃতি , সভ্য সমাজের সভ্য স্থানে পরিবেশনা করা  নৈতিকতার অবমূল্যায়নের বড় উদাহরণ নয় কি ??

আজকাল আরো কিছু সমস্যা ছাত্র সমাজে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে । তার মধ্য বড়দের সম্মান না করা , ছোটদের স্নেহ না করা , শিক্ষকদের অসম্মান করা , সর্বোপরি নিজেদেরকে নিজ নিজ নিয়ন্ত্রনে বাধতে না পারা ,যা সমাজ ও জাতির জন্য শুভকর নয় ।

 

একথা মনে রখতে হবে যে ,পৃথিবীর বড় বড় সকল উন্নয়ন ,সমস্যা সমাধান হত দরিদ্র মানুষেরাই করেছে । উদাহরণ স্বরুপ রাসূল (সঃ) এর ডাকে প্রথম কোন ধনী মানুষ সাড়া দেয়নি , সেই অসহায় দরিদ্র মানুষেরাই প্রথম সাড়া দিয়েছিল । এমনকি ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় কত জন ধনী মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল ?? এখানে ধনী –গরিব,কাতরহীন, সবল-দূর্বল,ছাত্র-শিক্ষক ইত্যাদি  সর্বোপরি  কেউ কারোর প্রতিপক্ষ নয় ,বরং আমরা পরস্পরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্হাপন করে সময়ের সাথে সাথে দেশকে  এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এটাই যেন হয় মূল অভিলাষ, স্পৃহা, অভীপ্সা, মনোরথ ও উদ্দেশ্য ।

আজ কাল দেখা যায় আইন প্রতিষ্ঠা কাজে দায়িত্ববান মানুষই , আইনের প্রতি সবচেয়ে বেশি বিরাগ , রং  সাইডে গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে , অন্যসব অন্যায় সাধারণ মানুষের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহ VIP রা বেশিই অমান্য করে , সেটা কি আমাদের অধিকার হরণের বড় উদাহরণ নয় কি ??

আমরা শুধু অধিকারের কথা বলি, আমরা কখনো ভেবে দেখেছি কি ,আমাদের কাছে যারা অধিকার পায়, তাদের অধিকার আমরা কি আদায় করেছি ??

 

অনেকের উদ্দেশ্য থাকে- , “ভাল কিছু করতে পারলে বিদেশ চলে যাব , দেশে থেকে কোন লাভ নেই………………………” এদের সর্ম্পকে কবি নিজেই বলেন ….

“স্বদেশের উপকারে নাই যার মন

কে বলে মানুষ তারে? পশু সেইজন”

দৃষ্টিভঙ্গি , ব্যবহার , সত্যবাদিতা , ন্যায়পরায়ণতা, নিষ্ঠাবান এগুলো সময়ের সাথে সাথে হ্রাস পাচ্ছে , যা আমাদের জীবন যাপনের গতিকে কঠিনতম অবস্থায় পৌছে দিচ্ছে ।

ভস্মভূমি ও সগোত্র ব্যক্তির উপকার সাধনে যে দ্বিধাগ্রস্ত, দেশের – শুভদ, কল্যাণে যে নিবেদিত হৃদয়শোণিত নয়, ভূগোলক,মেদিনী, মহি , অদিতি, অবনী, অখিল , উর্বী , ধরাতলে ও সম্প্রদায়ের মহাবিপর্যয়ে যার , মানসলোক , চিত্তপট,  হিয়া, প্রাণরক্ত কাঁদে না, সে চৈতন্যবর্জিত অমানুষ ছাড়া আর কিছুই নয়।

আব্দুর রহমান বিশ্বাস